এই বন্ধুরা
আপনারা যদি AHK Global Fiction এর নিয়মিত পাঠক হয়ে থাকেন তাহলে ব্ল্যাকহোল শব্দটির সঙ্গে আপনার পরিচিত । মহাবিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত এবং রহস্যময় জিনিস হল ব্ল্যাকহোল । ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে আরেকটি আর্টিকেল রয়েছে আপনারা চাইলে এখান থেকে আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন । ব্ল্যাকহোল হল মহাবিশ্বের একটি রাক্ষস যেখানে ভৌত বিজ্ঞানের কোন নিয়ম প্রয়োগ হয় না । এটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার অন্ত নেই । কিন্তু আজকের দিনেও বিজ্ঞানীরা ব্লাকহোল রহস্য ভেদ করে উঠতে সক্ষম হননি । ব্ল্যাকহোলের ঘনত্ব ও মহাকর্ষ বল মহাবিশ্বের যে কোন বস্তু থেকে কয়েক গুণ বেশি । তবে ভাবুনতো যদি কোন ব্ল্যাকহোল তার স্থান পরিবর্তন করে অর্থাৎ ব্ল্যাকহোলটি সরে যায় নিজস্ব জায়গা থেকে তাহলে কি ঘটবে । আর যদি সেই ব্ল্যাকহোল পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে তাহলে কি ঘটবে । আজকের আর্টিকেলে সেই সকল প্রশ্নের উত্তর জানাবো।
একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী Neil deGrasse Tyson এর মতে একটি ব্ল্যাকহোলে যদি কোন সোলার সিস্টেমের প্রবেশ করে তাহলে সেই দিনই সোলার সিস্টেমের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন হবে । সর্বোপরি সেখানে ভয়ঙ্কর বাজে কিছু ঘটবে । যদিও বিজ্ঞানীদের ধারণা যে ব্ল্যাকহোল সাধারত মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহ থেকে দূরে থাকে । তাই বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে ব্ল্যাকহোল এরকম হঠাৎ করে মহাবিশ্বে কোন গ্রহকে দর্শন করতে আসবে না । তবে এটি শুধুমাত্র একটি অনুমান । ব্ল্যাকহোল যেখানে থাকে তার আশেপাশে কোন মহাজাগতিক বস্তু থাকতে পারে না । কারণ ব্ল্যাকহোলের আকর্ষণ ক্ষমতার জন্য সেটি ব্ল্যাকহোলের ভেতরে পড়ে যায় । মহাবিশ্বে থাকা এই রাক্ষসে গর্ত থেকে আলোর গতি কখনো ভেদ করতে পারে না ।বরং সরলরেখা চলতে চলতে একটু বেঁকে যায় । আলোর এই ধর্ম ভৌতবিজ্ঞান এর সম্পূর্ণ বিপরীত । ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে ধারণা থেকে বিজ্ঞানীরা একটি কৃত্রিম ব্ল্যাকহোল তৈরীর চেষ্টা করেছিল যেটি কিনা ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর সুইজারল্যান্ড এর সার্ন গবেষণাগারে লার্জ হাদ্রণ কোলাইডোর মেশিনের সাহায্যে একটি মাইক্রোস্কোপিক ব্ল্যাকহোল সৃষ্টি করা হয়েছিল । এই মেশিনটি পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ এবং শক্তিশালী মেশিন গুলোর মধ্যে একটি । কিন্তু তাও এই মেশিনটি দিয়ে সৃষ্টি করা ব্ল্যাকহোল স্থায়ী হয়নি । অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে সেটিকে সামান্য দূরে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করার আগেই ব্ল্যাকহোল উবে যায় অর্থাৎ বাষ্পে পরিণত হয় । ব্ল্যাকহোলটি এরকমভাবে উবের যাওয়ার কোন সঠিক ব্যাখ্যা সেই মুহূর্তে বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল না । বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের ভবিষ্যদ্বানী অনুযায়ী ব্ল্যাকহোল শক্তি নির্গত করে আর এই তথ্য হকিং রেডিয়েশন তথ্য নামে পরিচিত । সর্বোপরি কিছু ব্যক্তি মনে করেন ব্ল্যাকহোলটিকে নিয়ে স্টিফেন হকিং ভয় পেয়েছিলেন যে মানবজাতির এই বৃহত্তর আবিষ্কার অর্থাৎ মাইক্রোস্কোপিক ব্ল্যাকহোল যেখানে থাকে সেখানকার আশেপাশে থাকা সমস্ত কিছুকে গিলে ফেলতে পারতো । তবে যদি আপনি নিজেই মাইক্রো অর্থাৎ ক্ষুদ্র ব্ল্যাকহোল তৈরি করতে চান তাহলে আপনার লার্জ হাদ্রণ কোলাইডোর এর এক্সপেরিমেন্ট করতে যে শক্তি প্রয়োজন রয়েছে তার তুলনায় ১০১৫ টাইমস বেশি শক্তি প্রয়োজন হবে । এত বিশাল পরিমাণ শক্তি শুধুমাত্র একটি ক্ষুদ্র ব্ল্যাকহোল তৈরি করবার জন্য প্রয়োজন হবে । বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই ক্ষুদ্র ব্ল্যাকহোলের আকার ১ মিলিমিটার । কিন্তু এরকম ব্ল্যাকহোল তৈরি করতে গেলে আপনার ৪ ডাইমেনশনাল স্পেসের প্রয়োজন । কিন্তু আমরা কখনই অফুরন্ত ব্ল্যাকহোল তৈরি করতে পারিনা । তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী সীমিত কিছু ব্ল্যাকহোল তৈরি করা যেতেই পারে । যদিও মহাবিশ্বে থাকা মাইক্রোস্কোপিক ব্ল্যাকহোল খুবই বৃহৎ । এর সঠিক আয়তন আমরা গণনা করতে পারিনা । তবে কিছু ধারণা অনুযায়ী আমাদের সূর্যের ভরের 6.6 বিলিয়ন গুন বেশি ।
বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর সবথেকে কাছে অবস্থিত ব্ল্যাকহোলটির নাম হল V616 Monocerotis যাকে সংক্ষেপে V616 MOON বলা হয় ।এটি আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় তিন হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত । এটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে থাকে । যেখানে মাধ্যাকর্ষণ ও ঘনত্ব সর্বাধিক । প্রতিটা ব্ল্যাকহোলের সাধারণত দুটি অংশ থাকে । একটি হল সিঙ্গলারটি এবং আরেকটি হল ইভেন্ট হরাইজন । বিজ্ঞানীদের মতে ব্ল্যাকহোলের আকার ও আয়তন প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে । আপনি যদি মহাবিশ্বে থাকা একটি ছোট্ট ব্ল্যাকহোল কে প্রতিনিয়ত অনবরত লক্ষ করেন তবে কিছু বছর পরে তার রাক্ষসী আকার আপনার শরীরে শিহরণ জাগাবে । বিজ্ঞানীদের মতে যদি একটি ক্ষুদ্র ব্ল্যাকহোলের ব্যাস এক মিলিমিটার ধরা হয় তবে কিছু সময় পর তার ভর বর্তমান ভোরের পাঁচগুণ বেশি হবে । এবং ব্ল্যাকহোলটি আমাদের পৃথিবীর নিকটবর্তী হয় তবে তার প্রভাব পৃথিবীর কেন্দ্রে পড়বে । কিন্তু আমাদের প্রশ্ন অনুযায়ী যদি ব্ল্যাকহোলটি পৃথিবীর মধ্যে প্রবেশ করে তাহলে কি ঘটবে ?
সর্বপ্রথম এই রাক্ষসি ব্ল্যাকহোল আমাদের পৃথিবী তিন ভাগের এক ভাগকে প্রভাবিত করবে এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পাবে । পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদও তার কক্ষপথ পরিবর্তন করবে এবং অন্য কোথাও চলে যাবে ।সর্বোপরি আমাদের পৃথিবী সম্পূর্ণভাবে চাঁদের আলো থেকে বঞ্চিত হবে এবং আমরা সবাই ধীরে ধীরে চোখ বুজবো । এই ব্ল্যাকহোল পৃথিবীর কেন্দ্রে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে মাত্র ৪২ মিনিটের মধ্যে সমগ্র পৃথিবীর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে ।এই রাক্ষসি ব্ল্যাকহোল এক সেকেন্ডে অনেক বেশী বেগে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত করবে । তার ফল স্বরূপ আমাদের পৃথিবীতে থাকা সমস্ত জীবজগৎ কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে । এই বিপুল পরিমাণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সূর্যের পরিধিকেউ অনেকটা শেষ করে দেবে । এই সময়ে পৃথিবীর ভর অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাবে এবং পৃথিবীর আকার আগ্নেয়গিরি থেকে বের হওয়ার লাভার মত দেখাবে । মাত্র এক সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের সোলার সিস্টেম ভয়ংকর কিছু ঘনঘন ধাক্কার সম্মুখীন হবে যা কিনা মিলিয়ন বছর আগে ঘটেছিলো । তবে আসল বিষয় এটাই যে, এই ঘটনার সাক্ষী হওয়ার জন্য তখন পৃথিবীতে কোন মানুষই বেঁচে থাকবে না ।
তো বন্ধুরা, আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা আরেকবার ব্ল্যাকহোল সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ধারণা নিয়েছি এবং জানতে পেরেছি একটি ব্ল্যাকহোল আমাদের সৌরজগতে কিংবা পৃথিবীর সম্মুখীন হলে করতে পারে । যা সত্যিই ভয়ংকর কিছু ঘটবে । আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন । এবং পড়া শেষ হলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন ।
Admin
AHK Global Fiction
একটি বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলা ব্লগ বা ওয়েবসাইট। এটি সাম্প্রতিক সময়েই যাত্রা শুরু করে । এটি এই ব্লগের সমস্ত কনটেন্টগুলোকে মানুষের সহজবোধগম্য করার জন্য একটি YouTube চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করে । আমাদের এই ব্লগের সমস্ত কনটেন্ট যদি আপনার পড়তে ভালো না লাগে তাহলে সরাসরি আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে চলে যান আর সেখান থেকে ভিডিও দেখে আসুন । আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ...
Follow her @ YouTube | Facebook | Twitter
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন