প্রকৃতির নানা বিচিত্র সৃষ্টি মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই রোমাঞ্চিত করে। আর বিশ্বজুড়ে এমন কিছু জায়গা রয়েছে যা শুধু অদ্ভুতই নয়, যা দেখে মনে হতে পারে এগুলো আমাদের পৃথিবীরই সৃষ্টি নয়। এসব জায়গা শুধু মানুষকে বিস্মিত বা অভিভূতই করে না, বিজ্ঞানীদেরও রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেয়। AHK GloBal FicTion এর আজকের পর্বে আপনাদের জানাবো, বৈজ্ঞানিকভাবে অসম্ভব কিন্তু বাস্তবে রয়েছে যে পাঁচটি জায়গা।
মোভাইল গোহা
রোমানিয়ার দক্ষিন পূর্বাঞ্চলে মাঙ্গালিয়া শহরের কাছেই রয়েছে মোভাইল গোহা নামে বিচিত্র এক গোহা। প্রাকৃতিকভাবে গোহার মুখটি বন্ধ হয়ে যায় অন্তত 55 লাখ বছর আগে। কিন্তু গোহার ভিতরে তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ইকোসিস্টেম যা বিজ্ঞানীদের রীতিমতো চমকে দিয়েছিলো। ১৯৮৬ সালে নতুন একটি পাওয়ার প্ল্যান তৈরির কাজ করতে গিয়ে আবিষ্কৃত হয় গোহাটি। সুরঙ্গ ধরে কিছুদূর যাওয়ার পরেই চোখে পড়ে বিশাল একটি চেম্বার যেখানকার পানি মূলত সালফিউরিক এসিড সমৃদ্ধ। ভিতরের বাতাস বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইডযুক্ত এবং বাইরের তুলনায় কমপক্ষে ১০০ গুন বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড রয়েছে। বাতাসে খুব সামান্য অক্সিজেন থাকলেও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে একটি ভিন্ন ইকোসিস্টেম তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত ৪৮ প্রজাতির প্রাণী শনাক্ত করেছেন যার মধ্যে ৩৩ প্রজাতির প্রাণী পৃথিবীর আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না।
দ্যি ডাবল ট্রি অব কাসর্জা
ইতালির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের পিডমন্টে গ্রানা ও কাসর্জার মাঝামাঝি স্থানে একটি অদ্ভুত বিষয় বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে। সেখানে একটি সুস্থ স্বাভাবিক চেড়ী গাছ রয়েছে। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, গাছটি বেড়ে ওঠেছে একটি মালভেরী গাছের মাথার ওপর। যদিও অনেক ধরনের পরগাছা রয়েছে যারা অন্য গাছের ওপর জন্মায় এবং জীবন ধারন করে। কিন্তু এগুলো আকারে বেশ ছোট হয় এবং খুব বেশিদিন বাঁচেও না। কিন্তু কাসর্জার মালভেরী গাছটি জীবিত তো বটেই, এর মাথায় বেড়ে ওঠা চেড়ী গাছটিও আকৃতিতে ছাড়িয়ে গেছে মালভেরী গাছটিকেও। গবেষকদের মতে, কোনো পাখি চেড়ী গাছের বীজ মালভেরী গাছের ওপর ফেলেছিলো। আর চেড়ী গাছটির মূল মালভেরী গাছটির ফাঁপা কান্ড বেয়ে মাটি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এতে করে চেড়ী গাছটিও মালভেরী গাছের মাথার ওপর খুব সহজেই বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে।
কালাচির ঘুমন্ত শহর
কাযাকিস্তানের আতমোলা অঞ্চলের ইসিল জেলায় রয়েছে ছোট্ট একটি শহর কালাচি। কিন্তু এখানকার বাসিন্দারা একটি অদ্ভুত সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শহরটির এক পঞ্চমাংশেরও বেশি মানুষ স্লীপ সিনড্রোমে আক্রান্ত। অর্থাৎ কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করেই গভীর ঘুমে ঢলে পড়ছে এখানকার মানুষ। সেই সাথে হেলোজিনেশন দেখা বা স্মৃতি ভিব্রমও দেখা দিয়েছে অনেকের মধ্যেই। অনেকের মতে, শহরের আশেপাশে ইউরেনিয়ামের খনি থাকায় রেডিয়েশনের প্রভাবে এমন ঘটনা ঘটছে। কিন্তু রক্ত পরীক্ষায় সেইরকম কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় নি। এ ঘটনা মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়লে শহরের অর্ধেক মানুষকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে অবশ্য জানানো হয়, কাছাকাছি পরিত্যাক্ত কিছু খনি থেকে কার্বন মনো অক্সাইড গ্যাস বাতাসে মিশে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় মানুষজন স্লীপ সিনড্রোমে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু কালাচির পাশের শহরেই স্লীপ সিনড্রোমের কোনো নজির পাওয়া যায় নি।
চির বজ্রপাতের দেশ
বজ্রপাতকে যদি ভয় পান তাহলে ভেনিজুয়েলের উত্তরাঞ্চলের কাডাটুম্বু নদী অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন। কারন প্রতি সন্ধ্যায় এখানে শুরু হয় ভীষণ বজ্রপাত যা ভোর পর্যন্ত চলতে থাকে। কাডাটুম্বু নদী যেখানে লেক মারাকাইভুতে পড়েছে সেখানেই চলে এই বজ্রপাত। দিনের বেলা স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধ্যা হওয়ার পরেই নদীর এক কিলোমিটার ওপরে তৈরি হয় ঝড়ো মেঘ এবং শুরু হয় বিদ্যুতের ঝলকানি। বছরে ১৪০ থেকে ১৬০ রাতেই এই স্থানে দেখা যায় এবং অন্তত দশ ঘন্টা ধরে চলে এমন বজ্রপাতের তান্ডব। আর বিদ্যুত চমকায় ঘন্টায় গড়ে ২৮০ বার। গবেষকদের মতে, তিন দিকের পর্বত দিয়ে ঘেরা লেক মারাকাইভোর উষ্ঞ আর্দ্র বায়ু ইলেকট্রিক্যাল চার্জ তৈরি করে। এবং উপর দিকে ওঠার পর ঠান্ডা বায়ুর সংস্পর্শে এসে এমন বজ্র বিদ্যুতের সৃষ্টি করে। যদিও কাডাটুম্বুর এই বজ্রপাত নিয়ে এখনো চলছে বিস্তর গবেষণা।
শয়তানের কেটলীঃ
যুক্তুাষ্ট্রের মিনিসোটায় লেক সুপেরিয়রের কোল ঘেষে তৈরি হয়েছে একটি স্ট্যাট পার্ক। আর এই পার্কের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে শয়তানের কেটলী নামে পরিচিত এই জলপ্রপাতটি। অদ্ভুত ভাবেই এই প্রপাতটি সমান দুইভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এর একটি সাধারন প্রপাতের মতোই বয়ে চলেছে কিন্তু বাকী অর্ধেক আক্ষরিক অর্থেই হারিয়ে গেছে পাহাড়ের অভ্যন্তরে।
অনেকের ধারনা এই পানি কোনো এক পাতাল নদীতে পড়েছে। কিন্তু এইই পাতাল নদীটি কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে তা এখনো বের করা সম্ভব হয় নি। বিজ্ঞানীরা নানাভাবে চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রতিবারই তাদেরকে নিরাশ হতে হয়েছে।
Admin
AHK Global Fiction
একটি বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলা ব্লগ বা ওয়েবসাইট। এটি সাম্প্রতিক সময়েই যাত্রা শুরু করে । এটি এই ব্লগের সমস্ত কনটেন্টগুলোকে মানুষের সহজবোধগম্য করার জন্য একটি YouTube চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করে । আমাদের এই ব্লগের সমস্ত কনটেন্ট যদি আপনার পড়তে ভালো না লাগে তাহলে সরাসরি আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে চলে যান আর সেখান থেকে ভিডিও দেখে আসুন । আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ...
Follow her @ YouTube | Facebook | Twitter
osadaron
উত্তরমুছুন