মানুষ উন্নতি করতে করতে চাঁদ, মঙ্গল গ্রহ ও মহাকাশে পৌঁছে গেছে । কিন্তু আমাদের চারপাশে এমন কিছু স্থান আছে যেগুলো সম্পর্কে এখনো আমরা পুরোপুরি জানি না । আজও সেগুলো রহস্যময় । যখন আমরা একটা রহস্য উদ্ঘাটন করে ফেলি দেখা যায় আরেকটি রহস্য আমাদের সামনে এসে হাজির হয় । এই পৃথিবীতে এমন কিছু প্রাকৃতিক স্থান আছে যেগুলো নিজেরাই একটা রহস্য । কিছু কিছু রহস্যের ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন । আবার কিছু কিছু আজও রহস্যই রয়ে গেছে । যদিও এই রহস্যগুলোর সত্য উদ্ঘাটনে বিজ্ঞানীদের গবেষণা জারি আছে । আজ আমরা এই পর্বে এমনই তিনটি স্থান সম্পর্কে জানবো যেগুলো প্রাকৃতিক হওয়ার সাথে সাথে রহস্যময় বটে ।
নরকের দরজাঃ
তুর্ক মেরিস্থানের অধিকাংশ জায়গাই মরুভূমির অন্তর্ভুক্ত । কারাকু মরুভূমির মাঝে মাঝে অবস্থিত ৩৫০ জন বাসিন্দা নিয়ে গঠিত একটি গ্রাম হল Darvaz বা Darvazan. এই শব্দটা একটা ফারসিয়ান শব্দ যার বাংলা অর্থ দরজা । ভু পৃষ্ঠে একাটা গর্ত , আর সেই গর্তে লকলক করে জ্বলছে আগুন । এই আগুন গত ৪৭ বছর ধরে জ্বলে চলেছে । পৃথিবীর মানুষের কাছে এটি একটি নরকের দরজা নামে পরিচিত । তুর্ক মেরিস্তানের কারাকু মরুভূমির অন্তর্গত এই গর্ত আসলে প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ স্থান । ১৯৭১ সালে সোভিয়েত জিওলজিষ্টরা এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের খনির খোঁজে এসেছিল । Darvaz গ্রামের এই স্থানে ড্রিল করার সিদ্ধান্ত নেন তারা । কিন্তু ড্রিলিং করার কিছুক্ষন পরেই ভু পৃষ্ঠের উপরের স্তর ভেঙ্গে পড়ে । এবং এক বিশালাকার গর্ত সৃষ্টি হয় । গর্তটি ২০০ ফুট চওড়া এবং ৬৬ ফুট গভীর । এই দুর্ঘটনায় কোন মানুষের মৃত্যু ঘটে নি । তবে গর্ত থেকে প্রচুর পরিমান মিথেন গ্যাস বের হতে থাকে । মিথেন গ্যাস একটা গ্রিন হাউস গ্যাস । যেটি মানুষ এবং জীব উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর । তাই এই গ্যাসের আউটপুট বন্ধ করা খুব জরুরী ছিল । এই ভাবনা থেকে ইঞ্জিনিয়াররা সিদ্ধান্ত নেয় গর্ততে আগুন জ্বালিয়ে দিবে । ভেবেছিল দুই এক সপ্তাহের মধ্যেই আগুন নিভে যাবে এবং গ্যাসের আউটপুট বন্ধ হয়ে যাবে । ইঞ্জিনিয়ারদের এই ধারণা ভুল ছিল । সেই ১৯৭১ সাল থেকে আজও এই গর্তে আগুন জ্বলে চলেছে । এর থেকে আপনি নিশ্চই ধারণা করতে পারছেন ওখানে কত পরিমানে মিথেন গ্যাস রয়েছে । প্রতি বছর অনেক পর্যটক এটি দেখতে যান । Door to Hell বা নরকের দরজা নামে এই জায়গাটি তেমন কোন অদ্ভুত ব্যাপার নয়, তবে বিজ্ঞানীদের কাছে আজও রহস্য যে, কবে বন্ধ হবে এই গর্তের আগুন যা ৫০ বছর ধরে লকলক করে জ্বলছে ।
মীর খনি
রাশিয়ার সাইবেরিয়াতে অবস্থিত মীর মাইন বা মীর খনি নামে পরিচিত এই স্থানটি একসময় পৃথিবীর সবথেকে বড় হীরের খনি ছিল । এক সময় এখান থেকে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ক্যারেট স্বর্ণ উত্তোলন করা হত । যখন হীরের ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেলো স্থানীয় মানুষরা খেয়াল করলো এই জায়গা কেমন জানি অদ্ভুত হয়ে গেছে । আকাশ থেকে দেখলে মনে হয় এটি যেন পৃথিবীর নাভি । এটির গভীরতা ১৭২২ ফুট এবং চওড়া প্রায় ৩৯০০ ফুট । মীর মাইন বা মীর খনি এত বড় যে এটা খুব সহজেই গুগল ম্যাপে দেখা যায় । সুরক্ষার কারনে বর্তমানে মীর খনির উপর No Flying Zone ঘোষণা করা হয়েছে । কারণ হেলিকপ্টারের পাইলটরা নালিশ করেছিলো মীর মাইনের উপর দিয়ে গেলে কোন শক্তি নিচের দিকে টেনে ধরে । এই ঘটনার পেছনে অনেকেই অনেক ধরনের ব্যাখ্যা দিয়েছে । তবে F Dilenchi একটা যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন । তিনি বলেছেন, মীর মাইন খুব গভীর হওয়ার কারনে খনির নিচের বায়ু ভু অভ্যন্তরের উষ্ণতার কারনে গরম হয়ে হালকা হয়ে উপরের দিকে ওঠে আসে । তারপর ঐ শূন্যস্থান পুরনের জন্য উপরের শীতল ভারি বায়ু নিচের দিকে নেমে যায় । ফলে বাতাসের এই উপর নিচ হওয়ার কারনে খনির মুখে একটা ঘূর্ণির সৃষ্টি হয় । এছাড়াও উষ্ণ বায়ুর ঘনত্ব কম হওয়ায় হেলিকপ্টারের লিফট কম হয় । তাই ঐ স্থানে গেলে হেলিকপ্টার কিছুটা নিচের দিকে নেমে যায় ।
Nazca Lines:
দক্ষিন পেরু অঞ্চলে আকাশ থেকে নিচের দিকে তাকালে ভু পৃষ্ঠের উপর দৈত্যাকার চিত্র চোখে পড়ে । প্রথমবার যখন এই চিত্রগুলো দেখা গিয়েছিল তখন গোটা বিশ্ব অবাক হয়েছিল । ৮০ কিলোমিটারের থেকেও বেশী এলাকায় হাজার হাজার রেখা চিত্র রয়েছে । এই চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে পাখি, বাঁদর আর অন্যান্য সব প্রাণীর চিত্র । এছাড়াও রয়েছে অনেক জ্যামিতিক নকশা যার মধ্যে আছে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ । স্থানীয়রা মনে করে এই চিত্রগুলো নাচকা কালচেটের অধিবাসীরা ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অংকন করেছিলো । তাই এগুলোকে নাচকালাইন্স বা নাচকা ড্রইং বলা হয় । প্ল্যান বা পার্শ্ববর্তী কোন পাহাড় থেকে দেখলে এগুলো ভালোভাবে বুঝা যায় । এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নকশাটা প্রায় ১২০০ ফুট লম্বা । এছাড়াও হামিং বার্ড ৩১০ ফুট লম্বা । শকুন ৪৪০ ফুট লম্বা । বানর ৩১০ ফুট লম্বা । মাকড়সা ১৫০ ফুট লম্বা । ১৯২৭ সালে পেরু উইয়ান আরকিওলজিসট তারিবাইও পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে ভ্রমণ করার সময় নাচকালাইন লক্ষ্য করেন । কিছু মানুষ এগুলোকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অঙ্গ মনে করেন । তারা বলেন, তৎকালীন সভ্যতার মানুষরা এটা বিশ্বাস করতো যে, আকাশ থেকে দেবতারা এসব দেখতে পারবে । আবার কিছু মানুষ বলেন এলিয়েনরা এসব বানিয়েছেন । গত ৯০ সাল থেকে নাচকালাইন্স এর রহস্য আজও উদ্ধার হয় নি । এগুলো কেন বানানো হয়েছিলো আর কারা বানিয়েছিল তা আজও একটি রহস্য ।
তো বন্ধুরা এই তিনটি জায়গার মধ্যে কোনটি আপনাকে বেশী অবাক করেছে সেটি অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ।
তো বন্ধুরা এই তিনটি জায়গার মধ্যে কোনটি আপনাকে বেশী অবাক করেছে সেটি অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ।
Admin
AHK Global Fiction
একটি বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলা ব্লগ বা ওয়েবসাইট। এটি সাম্প্রতিক সময়েই যাত্রা শুরু করে । এটি এই ব্লগের সমস্ত কনটেন্টগুলোকে মানুষের সহজবোধগম্য করার জন্য একটি YouTube চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করে । আমাদের এই ব্লগের সমস্ত কনটেন্ট যদি আপনার পড়তে ভালো না লাগে তাহলে সরাসরি আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে চলে যান আর সেখান থেকে ভিডিও দেখে আসুন । আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ...
Follow her @ YouTube | Facebook | Twitter
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন